মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করায় আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় সীরাত সম্মেলন পুলিশি বাধায় বানচাল হয়ে গেছে। এতে আয়োজকরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সীরাতুন্নবী সম্মেলন বন্ধ করায় নবীপ্রেমিক জনতাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। এ ধরণের ঘটনায় সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী চরিত্রই ফুটে উঠছে। নেতৃদ্বয় বলেন, সারাদেশে কোরআনের তাফসীর মাহফিল বন্ধের ষড়যন্ত্র মুসলিম জনতা বরদাশত করবে না।
রহমাতুল্লিল আলামীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ সকালে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও রহমাতুল্লিল আলামীন কনফারেন্স (সীরাত সম্মেলন) এর আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমীসহ শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের উপস্থিত থাকার কথা। সংগঠনের আহবায়ক মুফতী সাখাওয়াত হেুসাইন রাজী ইনকিলাবকে জানান, নবী (সা.) এর জীবনীর ওপর আলোচনার জন্য যথাযথ নিয়ম অনুসারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ভাড়া করা হয়। বুধবার বিকেলেই মিলনায়তনে মঞ্চ নির্মাণ ও মাইক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দলীয় কর্মী ও বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জড়ো হতে শুরু করে। কিন্ত পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেইটে তালা লাগিয়ে দেয়। পুলিশ আগত আয়োজক ও নেতা-কর্মীদের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রবেশ করতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আগাত শত শত মাদরাসার ছাত্র ও ওলামায়ে কেরাম রমনা থেকে মিছিল করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী। প্রতিবাদ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) এর ছেলে মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী শামছুদ্দোহা আশরাফী, মুফতী জুনায়েদ কাসেমী, মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, মুফতী রিজওয়ান রফিকী, মুফতী শামসুল আলম, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা গাজী ইয়াকুব ও মুফতী আহসান শরিফ।
প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ যারা সীরাতুন্নবী (সা.) সম্মেলন বানচাল করেছে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন। সীরাতুন্নবী সম্মেলনে রাসুল (সা.) জীবনী নিয়ে আলোচনা হয়। এসব আলোচনায় মহানবী (সা.) আদর্শ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্নীতি, ধর্ষণ নারী নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। তারা বলেন, আজ যারা মহানবীর আলোচনা বন্ধ করে দেয়া তারা ইসলামের দুশমন। যারা ভাস্কর্যের নামে রাজধানীতে মূর্তি নির্মাণে মরিয়া তাদের পরিণাম শুভ হবে না। তারা বলেন, মূর্তি পূজারিরাই মূর্তিকে সম্মান করে। অবিলম্বে মূর্তি নির্মাণের সকল আয়োজন বন্ধ করার জোর দাবি জানান তারা। পরে সীরাত সম্মেলন বানচালের প্রতিবাদে আল্লামা মামুনুল হক ও মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পুরানা পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলার মোড় দিয়ে বায়তুল মোকাররমে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ রহমাতুল্লিল আলামীন কনফারেন্সে প্রশাসনের বাধায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকার করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে-এর মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। এক বিবৃতিতে ইউনুছ আহমাদ বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর জীবনী আলোচনার অনুষ্ঠানে বাধা দেয়ায় রাসুল (সা.) প্রেমিক জনতাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। তিনি বলেন, রহমাতুল্লিল আলামীন কনফারেন্স কোন রাজনৈতিক কিংবা সরকার বিরোধী কোন অনুষ্ঠান ছিল না। এটা নবী (সা.) এর জীবনীমূলক সীরাত প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী এবং আলোচনা ছিল। সরকার এধরণের একটি অনুষ্ঠানে কেন বাধা দিল? নবী (সা.) এর জীবনী আলোচনায় বাধা দিয়ে সরকার অত্যন্ত খারাপ দৃস্টান্ত স্থাপন করেছে। মহাসচিব বলেন, এধরণের আলোচনায় বাধা দিয়ে সরকার নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর জন্য সরকারকে খেসারত দিতে হতে পারে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ও দলের ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী এক বিবৃতিতে বলেছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি ও সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আজ অনুষ্ঠান শুরু করার মুহূর্তে হুট করে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রাহমাতাল্লিল আলামিন কনফারেন্স বন্ধ করে দেয়া দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একটি মুসলিম রাষ্ট্রে আল্লাহর রাসুল (সা.) এর শানে সেমিনার করতে না দেয়া কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। আজকের সীরাতুন্নবী (সা.) সেমিনার বন্ধ করে দেয়া একটি অশনি সঙ্কেত। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরআন তাফসির এবং ওয়াজ মাহফিলগুলো বন্ধ করার কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না।